পবিত্র কোরআনের নির্দেশিত আয়াত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী অযুর ফরজ চারটি নির্ধারিত হয়েছে। এ ফরজগুলো হচ্ছে-
১. মুখ মন্ডল পরিষ্কার করা।
২. কুনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করা।
৩. মাথা মাসেহ করা।
৪. টাখনু সহ পা পরিষ্কার করা।
১. মুখমন্ডল পরিস্কার করা : অযুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মুখমন্ডল পরিষ্কার করা। দুই হাতে পানি নিয়ে মুখমন্ডল ধোয়ার মাধ্যমে মুখের সব জীবাণু দূর হয়। এভাবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত মুখে পানি দিতে থাকলে রোগ জীবাণু থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; হাদিসে এসেছে, তিনি অজু করলেন এবং তার মুখমন্ডল ধুলেন। এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে অনুরূপ করলেন।
অর্থাৎ আরেক হাতের সঙ্গে মিলিয়ে মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তার বাম হাত ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে পা ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর আরেক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেন: আমি আল্লাহর রাসূল ( সাঃ ) কে এভাবে অজু করতে দেখেছি। ( সহিহ্ বুখারী : ১৪২)
২. কুনুই সহ দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করা : হাদিসে রয়েছে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমন্ডল পরিষ্কারের পর কুনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করেছেন।” (বুখারী : ১৬৪ ও ১৮৫)
৩. মাথা মাসেহ করা : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুই হাত ভিজিয়ে একবার মাসেহ করতেন। মাসেহ করার সময় তিনি দুই হাতের আঙ্গুল এক জায়গায় মিশিয়ে সামনের দিক হতে চুলের উপর দিয়ে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পেছন থেকে উভয় হাত টেনে যেখান থেকে শুরু করেছিলেন আবার সেখানে নিয়ে যেতেন। (সহিহ বুখারী : ১৮৫)
তারপর হাত ভিজিয়ে দুটি শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে দুই কানের ভেতর দিকে কানের ভাঁজে ভাঁজে ঘোরাতে হবে এবং দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কানের পিঠ অর্থাৎ বাইরের অংশ মাসেহ করতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১২১ ও ১৩৩)
৪. টাখনুসহ পা পরিষ্কার করা : হাদীসে এসেছে, ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথা হতে গোড়ালি ও টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে। (সহীহ মুসলিম : ২০৪৬)
আমাদের করণীয় : নামাজ তথা ইবাদত-বন্দীগীতে অজুর গুরুত্ব অত্যাধিক। যখনই ইবাদত-বন্দেগী করার ইচ্ছা পোষণ করবে তখনই এই চারটি কাজ গুরুত্ব সহকারে ধারাবাহিক ক্রমে আদায় করতে হবে। তাছাড়া ওযুর সুন্নত রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে। আল্লাহ তা’আলা সবাইকে অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে ইবাদত বন্দেগী করার তৌফিক দান করুক।
গোসলের ফরজ তিনটি
১.ভালোভাবে কুলি করা।
২. নাকের ভিতরে পানি দেওয়া।
৩. পুরো শরীর ধৌত করা।
১. ভালোভাবে কুলি করা : গোসলের প্রথম ফরজ হলো গরগড়া করে কুলি করা। মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে থাকে, গলার ভেতরেও কফ জমে থাকে, তাই গরগরাসহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভেতর জমে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও ফরজ গোসলের অংশ হিসাবে কুলি করেছেন। (সহীহ বুখারী : ২৫৭ ও ২৬৫)
২. নাকের ভিতরে পানি দেওয়া : আরেকটি গোসলের ফরজ হচ্ছে নাকের ভেতর পানি দেওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নাকে পানি দিয়েছেন। এই সম্পর্কিত একাধিক হাদীস বর্ণিত রয়েছে। (সহীহ বুখারী : ২৬৫)
৩. পুরো শরীর ধৌত করা : এমন ভাবে গোসল করতে হবে যাতে শরীরের কোন অঙ্গ শুকনো না থাকে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন গোসল করতেন তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ : ২১৭)
যে ব্যক্তি পবিত্রতার উদ্দেশ্যে গোসল করে, তার পাপগুলো ঝরে যায় এবং ঝরে যাওয়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি রূপে গণ্য হয়। (আল হাদিস)
তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি
১/ নিয়ত করা।
২/ দুই হাত জমিনের উপরে মেরে একবার সমস্ত চেহারা মাসাহ করা।
৩/ দ্বিতীয় বার জমিনে হাত মেরে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা।
বিঃ দ্রঃ- মুখমন্ডল বা হস্তদ্বয়ের নখ পরিমাণ অংশ যদি মাসাহ করা না হয়, তাহলে তায়াম্মুম হবে না। তাই হাতের আংটি ও চুড়ি নাড়াচাড়া করে নিতে হবে ও আঙুল খিলাল করতে হবে।
নামাজের বাহিরে ৭টি ফরজ
১/নামাজে শরীর পাক পবিত্র হতে হবে,
২/ যে কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়বেন, সেই পোশাকটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে, কোন ধরনের নাপাকি ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি থাকতে পারবে না।
৩/ যেখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বেন, সে জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে, নাপাক জায়গায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না।
৪/ সতর ঢাকা অর্থাৎ পুরুষদের জন্য হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত আর মহিলাদের জন্য উভয় হাত কবজি পর্যন্ত, উভয় পা টাখনু পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল ব্যতীত সর্বাঙ্গ ঢেকে নামাজ আদায় করতে হবে।
৫/চেহারা এবং বুক কেবলার দিকে থাকতে হবে।
৬/সময় মত নামাজ পড়তে হবে যেমন:ফজরের নামাজ ফজরে, জোহরের নামাজ জোহরে,আসরের নামাজ আসরে,মাগরিবের নামাজ মাগরিবে,এশারে নামাজ এশাতে, আদায় করতে হবে।
৭/ নামাজের নিয়ত করা। আপনি যেই ওয়াক্তের নামাজ পড়বেন সেই ওয়াক্তের নিয়ত করতে হবে। যেমন মনে করেন, আপনি যোহরের নামাজ আদায় করতেছেন জোহরের নিয়ত করবেন।
বাংলায় এভাবে নিয়ত করবেন, আমি কেবলামুখী হয়ে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করিতে,
এভাবে সুন্নত,নফল, এবং ফরজ নামাজের নিয়ত করবেন
এ সাতটি হচ্ছে নামাজের বাহিরের ফরজ
নামাজের ভিতরের ৬টি ফরজ
এখন আমরা জানবো নামাজের ভিতরের ৬ ফরজ
১/ তাকবীরে তাহরীমা বলা অর্থাৎ মুখে আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করতে হবে। এবং অভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত তুলে হাত বাঁধতে হবে। অতঃপর নামাজের পরবর্তী কার্যক্রম করতে হবে।
২/ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা। মনে রাখবেন কোন কারণ ছাড়া বসে নামাজ আদায় করলে নামাজ হবে না।
দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ফরজ, শারীরিকভাবে যদি অসুস্থ হন তাহলে বসে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
৩/ কেরাত পাঠ করা। যদি ইমাম সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েন তাহলে আর কেরাত পাঠ করতে হবে না।
যদি একাকী নামাজ আদায় করেন তাহলে আপনাকে কেরাত পাঠ করতেই হবে।
৪/ রুকু করা। একবার সুবহানাল্লাহ বলতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
৫/সিজদা করা সেজদাতে ৩/৫/৭ সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আলা পাঠ করতে হবে, প্রথম সেজদা দেওয়ার পর দ্বিতীয়
সেজদা দেওয়ার আগে কমপক্ষে ১ বার সুবহানাল্লাহ বলতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় বসে থাকতে হবে।
৬/ শেষ বৈঠকে বসতে হবে। নামাজের শেষে বসে আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করতে হবে
এটাকে আখেরি বৈঠক বলা হয়, অতঃপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
এগুলোকে নামাজের ফরজ বা আরকান ও আহকাম বলা হয়।
হজের ফরজ ৩টি
এক. ইহরাম বাঁধা। দুই. উ’কুফে আ’রাফা (বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা)। তিন. তাওয়াফুয জিয়ারাত।
হজের ওয়াজিব ৬টি
এক. ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড়গুলো মধ্যে ৭ বার সায়ি করা।
দুই. অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যদয় পর্যন্ত একমুহূর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
তিন. মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিক্ষেপ করা।
চার. ‘হজে তামাত্তু’ ও ‘কিবরান’ কারীরা ‘হজ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
পাঁচ. ইহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল কাটা।
ছয়. মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালে তাওয়াফ করা।
এছাড়াও আর যে সমস্ত আমল রয়েছে, এর সবগুলো সুন্নত অথবা মুস্তাহাব।