রমজানের পর রমজান গেলেও ইফতারের দোয়া আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন আজ আমরা ইফতারের দোয়া সম্পর্কে জেনে নেই।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেনো এই মাসে রোজা পালন করে।’ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিলো; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫ ও ১৮৩)।
ইফতারের আগে যে দোয়া পড়তে হয়
ইফতারের দোয়া আরবী উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা চুমতু, অ আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।
ইফতারের দোয়া বাংলা অর্থ:
আল্লাহর আপনার নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)
রোজার নিয়ত
মুসলমানদের জন্য সুবহেসাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকলপ্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। যাকে শরীয়তের পরিভাষায় রোজা বলা হয়ে থাকে। রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে হয়। (আমি আগামীকাল রোজা রাখব) এটা বললেই নিয়ত করা হয়ে যায়। কিংবা রোজা রাখার ইচ্ছাপোষণ করলেও নিয়ত করা হয়ে যাবে। তবে আমাদের মাঝে প্রচলিত যে দোয়া আছে সেটা অর্থসহ উল্লেখ করব৷ দেখুন তাহলে রোজার পরিপূর্ণ নিয়ত।
রোজার নিয়ত উচ্চারণ – নাওয়াইতু-আন আছুম্মা গাদাম মিন-শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়ত বাংলা অর্থ – হে আল্লাহ, আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানে তোমারপক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার নিয়্যত করলাম। অতএব, তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার রোযা কবুল কর| নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া এভাবেও পড়তে পারেন
ইফতারের দোয়া উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু, ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
ইফতারের দোয়া বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইফতারের পর যে দোয়া পড়তে হয়
ইফতারের দোয়া উচ্চারণ: জাহাবাজ জামাউ, ওয়াবতালাতিল উ’রুকু, ওয়া ছাবাতাল আযরূ ইনশাআল্লাহ।’
ইফতারের দোয়া বাংলা অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
ইফতারের সময় যে যে কাজগুলো করতে হয়
১. ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা।
২. অন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতারে মনোযোগের সাথে করা।
৩. বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৪. খেজুর কিংবা সাদা পানি দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ আদায় করা।
৫. ইফতারের সময় ভারী খাবার না খাওয়া। মাগরিবের নামাজ আদায় করে তারপরে তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়া। তাতে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে।
ইফতারের দোয়া শুরুতে
بِسْمِ الله اَللَّهُمّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلى رِزقِكَ وَ اَفْطَرْتُ
ইফতারের দোয়া আরবি উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, অ আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু।
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদিসে যথাসময় ইফতার করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ যতদিন ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করবে; ততদিন তারা কল্যাণ লাভ করবে।’
ইফতারের সময় করণীয়
১. সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা।
২. ইফতারের সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতার করা।
৩. ইফতারের সময় হলে বেশী বেশী দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৪. খেজুর, সাদা পানি কিংবা দুধ দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ জামাতে পড়া।
৫. ইফতারে দেরি করেতে গিয়ে জামাত তরক না করা।
৬. ইফতারের সময় ভারী খাবার না খাওয়া। মাগরিবের নামাজ আদায় করে তৃপ্তিসহ পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া। আর তাতে শরীর থাকে সুস্থ ও সবল। ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খেলে জামাআত ও ইবাদত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
ইফতারের পরে বা ইফতারের সময় এই দুয়াটি পড়ুন-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতারের সময় বলতেন:
ذَهَبَ الذَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ: ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবাতালাতিল উরুকু; ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) তৃষ্ণা নিবারণ হয়, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয় এবং আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হয়’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
বিশেষ করে
ইফতারের সামনে বসে তাসবিহ-তাহলীল, তওবাহ-ইসতেগফার, দুআ-দরূদ পড়ে ইফতারের আগে কিছু সময় কাটান। রোজা ভাঙার আগ মুহূর্ত থেকে আল্লাহ তায়ালা বান্দার যে কোনো দোয়া কবুল করেন।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রোজা ভাঙার আগে তওবা করার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফীক দান করুন। উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী রোজা ভাঙার অনুমতি প্রদান করুন। আমীন।
সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতার শেষ হয়। ইফতারের মুহূর্তটি রোজাদারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সময়। ইফতারের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ রোজা ভঙ্গ করতেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ হয় যখন সে রোজা ভাঙে। আরেকটি হল যখন সে রবের সাথে দেখা করে।’ (তিরমিযী, হাদীসঃ ৭৬৬)
ইফতারের সময় যে দোয়া পড়বেন
ইফতারের সময় যে দোয়া পড়তে হয়— সে সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা এসেছে। ইফতারের পরের দোয়ার কথাও উল্লেখ হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন-
ইফতারের দোয়া আরবি :
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ : জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থ : (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
ইফতারের দোয়া আরবি :
بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিজের মাধ্যমে ইফতার করেছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)
ইফতারের ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা হলো- ইফতারে বিলম্ব করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যত দিন পর্যন্ত সময় হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের সঙ্গে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৫২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে ইফতার করার ও রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইফতারের সময় যে দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করা উচিত
ইফতারের সময় এই দোয়াগুলো পাঠ করা সওয়াব ও কল্যাণের কাজ। ইফতারের আগের মুহূর্তে ইস্তেগফার বেশি করে পড়ুন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। রোজাদারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার অনেক ফজিলত রয়েছে। তাই ইফতারের সময় বেশি করে ইস্তেগফার পড়া-
আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি – তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরজীবিত, চিরস্থায়ী, এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করি। আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি কোন ক্ষমতা নেই, তিনি সর্বোচ্চ, মহান।
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল, আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হায়্যুলকাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওঅতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়িল আজিম।
এই দোয়াটি ইফতারের সময় ক্ষমা প্রার্থনায় বিশেষভাবে পাঠ করা যেতে পারে –
উচ্চারণ: ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিয়াত কুল্লা শায়ীন আন তাগফিরলি।’
অর্থ: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্বব্যাপী রহমতের আবেদন করছি, আমাকে ক্ষমা করুন।’ (ইবনে মাজাহ)
ইফতারের সময় বিশ্বনবীর দোয়া
হজরত মুআয ইবনে যুহরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন তিনি এই দোয়াটি পড়তেন:
হে আল্লাহ, তোমার জন্য আমি রোজা রেখেছি এবং তোমার রিযিকের জন্য আমি আমার রোজা ভঙ্গ করেছি
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই আমি ইফতার রেখেছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)
ইফতারের পর বিশ্বনবীর প্রার্থনা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন:
ذَهَبَ الذَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ: ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবাতালাতিল উরুকু; এটা চাবাতাল আজরু ইনশাল্লাহ।
অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) তৃষ্ণা নিবারণ হয়, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয় এবং আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হয়’ (আবু দা জুদ, মিশকাত)
অন্যের বাড়িতে মেহমান হয়ে ইফতার করলে এই দোয়া পড়ুন-
أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرارُ، وصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصّائِمُونَ.
উচ্চারণ: আকালা তাআমাকুমুল আবরারু, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালয়কাতু, ওয়া আফতওয়ারা ইংদাকুমুস সাইমুন। (আবু দাউদ)