কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

কবর জিয়ারত ইবাদত। পরকালের কথা স্মরণ রাখতেও কবর জিয়ারত করা জরুরি। আবার গুনাহমুক্ত জীবন গড়তেও কবর জিয়ারত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জিয়ারতকারীকেও ক্ষমা করা হবে।

কবরের পাশে গিয়ে দোয়া পড়া, কবরস্থ ব্যক্তির মুক্তির জন্য দোয়া করাই জিয়ারতের উদ্দেশ্য। নিজেদের জন্যও দোয়া করা উত্তম।

কবর জিয়ারতের দোয়া

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন—

বাংলা উচ্চারণ : আস্সালামু আলাইকুম ইয়া-আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা অলাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার।

অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করেন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। ( সুনানে তিরমিজী, হাদীস : ১০৫৩ )

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন—

উচ্চারণ : আস্সালামু আলাইকুম দা-রা ক্বাওমিম মু’মিনীন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন।

এর পর একে একে দরুদ শরীফ, সুরা ফাতিহা ও ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে। তারপর মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে মোনাজাত করতে হবে।

কবর জিয়ারতের সময়

কবর জিয়ারতের জন্য কোনো সময়ের বিধিনিষেধ নেই। যেকোনো দিন যেকোনো সময় কবর জিয়ারত করা যায়। তবে জুমার দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমালাভের কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা অথবা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।

কবরস্থানে গিয়ে কী করা উচিত

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

মুসলমানদিগকে কবর দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির মুক্তির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করা হয়। কবরস্থানকে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখা কর্তব্য। কবরের ওপর দিয়ে হাঁটা চলা করা কিংবা কবরের অবমাননা করা উচিত নয়। কবরস্থানে প্রবেশ করে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ বলতে হয়। দরুদ শরীফ, সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে হয়। দোয়া শুধু একজনের জন্য নয়, সব মুর্দার জন্যই করতে হয়। শবে বরাত ও দুই ঈদের দিনে অনেকে পারিবারের সদস্যদের নিয়ে কবর জিয়ারত করতে আসেন। প্রিয় আত্মীয়ের সুনির্দিষ্ট কবরে এলেও দোয়া করতে হয় সবার জন্য

কবরস্থানে গিয়ে কী করা উচিত নয়

প্রিয়জন, মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের কবরের পাশে গেলে মন বিষণ্ন হওয়া বা চোখ অশ্রুসিক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাই বলে কবরের কাছে গিয়ে হা–হুতাশ করা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ক্রন্দন করেন। তাঁর সঙ্গীসাথীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হয়। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাঊদ)

কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে

কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াগুলো পড়তেন, তা হলো, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’ এর অর্থ, ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,০৫৩)

আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। অর্থ: মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশা আল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (সহিহ মুসলিম: ২৪৯)

কবরস্থানে পবিত্র হয়ে গিয়ে প্রথমে সালামের উল্লেখসহ দোয়া পড়তে হবে। এ ছাড়া অন্য মুখস্থ সুরা পড়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে।

কবরস্থানে যা করা যাবে না

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

মহানবী (সা.) কবরস্থানে বেশ কিছু কাজ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

১.রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ো না এবং কবরগুলোকে উৎসবের জায়গা বানিয়ো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২)

২.হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘পুরো পৃথিবীই মসজিদ, শুধু কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।’ ( তিরমিজি, হাদীস: ৩১৭ )

৩. কবরস্থানে পশু জবাই করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামে (কবরের পাশে) কোনো জবাই নেই। জাহিলি যুগের লোকজন কবরে গাভি বা ছাগল জবাই করত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,২২২)

৪.কবরের উপরে বসা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কেউ কবরের ওপর বসবে, এর চেয়ে উত্তম হলো আগুনের ওপর বসা। আর সেই আগুন যেন তার কাপড় পুড়িয়ে দিয়ে চামড়া পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়।’ ( সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭১)

৫.কবরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা নিষেধ। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবরের দিকে (মুখ করে) নামাজ আদায় করবে না এবং তার উপর বসবেও না।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭২)

কবর জিয়ারতের পদ্ধতি

বিভিন্ন হাদীসের আলোকে জানা যায়, রাসূল (সা.) প্রায় সময় শেষ রাতেই কবর জিয়ারত করতেন। তাই সম্ভব হলে শেষ রাতে কবর জিয়ারত করা উত্তম। কেননা মন তখন অধিক নরম থাকে। তাছাড়া অন্য সময়ও কবর জিয়ারত করা রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। অধিকাংশ আলেমের মতে, জুতা-স্যান্ডেল পায়ে রেখে কবরের কাছে যাওয়া যায়। তবে ইমাম আহমদের মতে, প্রয়োজন না হলে জুতাসহ যাওয়া মাকরুহ। (ফিকহুস সুন্নাহ)। জিয়ারতকারী যখন কবরের কাছে পৌঁছবে, মৃত ব্যক্তির মাথা বরাবর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। জিয়ারতকারী কবরবাসীকে সম্বোধন করে সালাম দেবে এবং তাদের জন্য মহান প্রভুর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করবে। এ ক্ষেত্রে হাত তুলে ও না তুলে উভয় অবস্থায় দোয়া করা যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বাকি কবরস্থানে পৌঁছে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছিলেন। (মুসলিম)

কবর জিয়ারতের দোয়া

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই তাদের আমলনামা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৩ শ্রেণির মানুষ মারা গেলেও তাদের আমল জারি থাকে। যেমন যারা দুনিয়ার জীবনে সাদকায়ে জারিয়া, উপকারি ইলম এবং নেক সন্তান রেখে যান। কেননা যতদিন পর্যন্ত মানুষের সাদকার কর্মকান্ড জারি থাকে, উপকারি ইলমের চর্চা থাকে কিংবা রেখে যাওয়া নেক সন্তান দোয়া বা ভালো কাজ করতে থাকে, ততদিন এসবের সাওয়াবও মৃত ব্যক্তির আমলনামায় যোগ হতে থাকে।
এ কারণে রাসুল স. মৃত ব্যক্তির নিকট সাওয়াব পাঠানোর আবেদনস্বরূপ সাহাবাদের কিছু দোয়া শিখিয়েছেন, যা তারা কবর জিয়ারতের সময় পড়তেন।

হাদীসে এসেছে- হযরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল স. তাদেরকে এ দোয়া শিক্ষা দিতেন।

উচ্চারণ : আস্সালামু আলা আহলিদদিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমিনা ওয়াল মুসতাখিরিনা ওয়া ইন্না ইন শাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুন।’ (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : মুমীন, মুসলীম কবরবাসীদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের মধ্য থেকে যারা আগে মারা গেছেন এবং যারা পরে ( মৃত্যুবরণ করবেন ) তাদের ওপরও আল্লাহ দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ , আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো।

উচ্চারণ : ‘আস্সালামু আলা আহলাদদিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়ালমুসলিমিনা ওয়া ইন্না ইন শাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুনা নাসআলুল্লাহু লানা ওয়া লাকুমুল আ’ফিয়াতা।’ (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : ‘মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায়, নিশ্চয়ই আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আমরা তোমাদের জন্য এবং আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’

এ দোয়া শুধু কবরবাসীর জন্যই নয়, বরং এ দোয়া নিজেদের জন্যেও। যদি কোনো ব্যক্তির এ দোয়া কবুল হয়ে যায়, তবে এ থেকে উপকারিতা লাভ করবে উভয়ে। অত‌এব, কবরের কথা স্মরণ হলে কিংবা কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ দোয়া করার মুসলিম উম্মাহর জন্য জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজের এবং মৃত ব্যক্তির কল্যাণ কামনায় উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কবর জিয়ারত ইবাদত। পরকালের কথা স্মরণ রাখতেও কবর জিয়ারত করা জরুরি। আবার গুনাহমুক্ত জীবন গড়তেও কবর জিয়ারত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জিয়ারতকারীকেও ক্ষমা করা হবে।

কবরের পাশে গিয়ে দোয়া পড়া, কবরস্থ ব্যক্তির মুক্তির জন্য দোয়া করাই জিয়ারতের উদ্দেশ্য। নিজেদের জন্যও দোয়া করা উত্তম।

কবর জিয়ারতের দোয়া

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন—

السّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

বাংলা উচ্চারণ : আস্সালামু আলাইকুম ইয়া-আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা অলাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার।

অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করেন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। ( সুনানে তিরমিজী, হাদীস : ১০৫৩ )

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন—

السّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنين، وَإِنّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

উচ্চারণ : আস্সালামু আলাইকুম দা-রা ক্বাওমিম মু’মিনীন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন।

অর্থ : মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)

এর পর একে একে দরুদ শরীফ, সুরা ফাতিহা ও ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে। তারপর মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে মোনাজাত করতে হবে।

কবর জিয়ারতের সময়

কবর জিয়ারতের জন্য কোনো সময়ের বিধিনিষেধ নেই। যেকোনো দিন যেকোনো সময় কবর জিয়ারত করা যায়। তবে জুমার দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমালাভের কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা অথবা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।

কবরস্থানে গিয়ে কী করা উচিত

মুসলমানদিগকে কবর দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির মুক্তির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করা হয়। কবরস্থানকে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখা কর্তব্য। কবরের ওপর দিয়ে হাঁটা চলা করা কিংবা কবরের অবমাননা করা উচিত নয়। কবরস্থানে প্রবেশ করে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ বলতে হয়। দরুদ শরীফ, সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে হয়। দোয়া শুধু একজনের জন্য নয়, সব মুর্দার জন্যই করতে হয়। শবে বরাত ও দুই ঈদের দিনে অনেকে পারিবারের সদস্যদের নিয়ে কবর জিয়ারত করতে আসেন। প্রিয় আত্মীয়ের সুনির্দিষ্ট কবরে এলেও দোয়া করতে হয় সবার জন্য

কবরস্থানে গিয়ে কী করা উচিত নয়

প্রিয়জন, মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের কবরের পাশে গেলে মন বিষণ্ন হওয়া বা চোখ অশ্রুসিক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাই বলে কবরের কাছে গিয়ে হা–হুতাশ করা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ক্রন্দন করেন। তাঁর সঙ্গীসাথীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হয়। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাঊদ)

কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে

কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াগুলো পড়তেন, তা হলো, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’ এর অর্থ, ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,০৫৩)

আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। অর্থ: মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশা আল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (সহিহ মুসলিম: ২৪৯)

কবরস্থানে পবিত্র হয়ে গিয়ে প্রথমে সালামের উল্লেখসহ দোয়া পড়তে হবে। এ ছাড়া অন্য মুখস্থ সুরা পড়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে।

কবরস্থানে যা করা যাবে না

মহানবী (সা.) কবরস্থানে বেশ কিছু কাজ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

১.রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ো না এবং কবরগুলোকে উৎসবের জায়গা বানিয়ো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২)

২.হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘পুরো পৃথিবীই মসজিদ, শুধু কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।’ ( তিরমিজি, হাদীস: ৩১৭ )

৩. কবরস্থানে পশু জবাই করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামে (কবরের পাশে) কোনো জবাই নেই। জাহিলি যুগের লোকজন কবরে গাভি বা ছাগল জবাই করত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,২২২)

৪.কবরের উপরে বসা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কেউ কবরের ওপর বসবে, এর চেয়ে উত্তম হলো আগুনের ওপর বসা। আর সেই আগুন যেন তার কাপড় পুড়িয়ে দিয়ে চামড়া পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়।’ ( সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭১)

৫.কবরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা নিষেধ। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবরের দিকে (মুখ করে) নামাজ আদায় করবে না এবং তার উপর বসবেও না।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭২)

কবর জিয়ারতের পদ্ধতি

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) প্রায় সময়ই শেষ রাতে কবর জিয়ারত করতেন। তাই সম্ভব হলে শেষ রাতে কবর জিয়ারত করা উত্তম। কেননা মন তখন অধিক নরম থাকে। তাছাড়া অন্য সময়ও কবর জিয়ারত করা রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। অধিকাংশ আলেমের মতে, জুতা-স্যান্ডেল পায়ে রেখে কবরের কাছে যাওয়া যায়। তবে ইমাম আহমদের মতে, প্রয়োজন না হলে জুতাসহ যাওয়া মাকরুহ। (ফিকহুস সুন্নাহ)। জিয়ারতকারী যখন কবরের কাছে পৌঁছবে, মৃত ব্যক্তির মাথা বরাবর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। জিয়ারতকারী কবরবাসীকে সম্বোধন করে সালাম দেবে এবং তাদের জন্য মহান প্রভুর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করবে। এ ক্ষেত্রে হাত তুলে ও না তুলে উভয় অবস্থায় দোয়া করা যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বাকি কবরস্থানে পৌঁছে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছিলেন। (মুসলিম)

কবর জিয়ারতের দোয়া

মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই তাদের আমলনামা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৩ শ্রেণির মানুষ মারা গেলেও তাদের আমল জারি থাকে। যেমন যারা দুনিয়ার জীবনে সাদকায়ে জারিয়া, উপকারি ইলম এবং নেক সন্তান রেখে যান। কেননা যতদিন পর্যন্ত মানুষের সাদকার কর্মকান্ড জারি থাকে, উপকারি ইলমের চর্চা থাকে কিংবা রেখে যাওয়া নেক সন্তান দোয়া বা ভালো কাজ করতে থাকে, ততদিন এসবের সাওয়াবও মৃত ব্যক্তির আমলনামায় যোগ হতে থাকে।
এ কারণে রাসুল স. মৃত ব্যক্তির নিকট সাওয়াব পাঠানোর আবেদনস্বরূপ সাহাবাদের কিছু দোয়া শিখিয়েছেন, যা তারা কবর জিয়ারতের সময় পড়তেন।

হাদীসে এসেছে- হযরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল স. তাদেরকে এ দোয়া শিক্ষা দিতেন।

উচ্চারণ : আস্সালামু আলা আহলিদদিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমিনা ওয়াল মুসতাখিরিনা ওয়া ইন্না ইন শাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুন।’ (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : মুমীন, মুসলীম কবরবাসীদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের মধ্য থেকে যারা আগে মারা গেছেন এবং যারা পরে ( মৃত্যুবরণ করবেন ) তাদের ওপরও আল্লাহ দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ , আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো।

উচ্চারণ : ‘আস্সালামু আলা আহলাদদিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়ালমুসলিমিনা ওয়া ইন্না ইন শাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুনা নাসআলুল্লাহু লানা ওয়া লাকুমুল আ’ফিয়াতা।’ (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : ‘মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায়, নিশ্চয়ই আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আমরা তোমাদের জন্য এবং আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’

এ দোয়া শুধু কবরবাসীর জন্যই নয়, বরং এ দোয়া নিজেদের জন্যেও। যদি কোনো ব্যক্তির এ দোয়া কবুল হয়ে যায়, তবে এ থেকে উপকারিতা লাভ করবে উভয়ে। অত‌এব, কবরের কথা স্মরণ হলে কিংবা কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ দোয়া করার মুসলিম উম্মাহর জন্য জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজের এবং মৃত ব্যক্তির কল্যাণ কামনায় উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মসজিদে প্রবেশের দোয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *