ঘুমানোর দোয়া- ঘুমানোর আগে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবি। মুসলমানের প্রতিটি কাজ সওয়াবের। প্রতিটি কর্ম ও ক্রিয়ার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বিনিময় দান করবেন। সে জন্য সবকিছু আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী হওয়া জরুরি। রাসুল (সা.)-এর ৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে উম্মতকে তিনি সর্বোৎকৃষ্ট ও উজ্জ্বলতর পথনির্দেশনা দিয়েছেন। তার সেই নিদের্শনা কিংবা অভ্যাস-চরিত আমাদের কাছে সুন্নত নামে সুপরিচিত।
আল্লাহ তাআলা তার রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে বলেছেন। সুন্নতের অনুসরণ মানে রাসুলের অনুকরণ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যে রাসুলের আনুগত্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য করল।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৮০)
ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজ।
একটি হাদিসে ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাতে দেরি করে না ঘুমানো
রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
তাই রাতের বেলা কোনো অহেতুক কাজ করে, ইন্টারনেট ব্রাউজিংকরে, কোনো বিনোদন উপভোগে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত।
একাকী ঘরে না ঘুমানো
কোনো ঘরে একা ঘুমানোর ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৫০)
খোলা আকাশের নিচে না ঘুমানো
অনুরূপ ভাবে ছাদেও ঘুমানো যাবে না। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪১)
রাতে নিরাপদে ঘুমানোর জন্য রাসুল (সা.) কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলোর ওপর আমল করলে একদিকে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে প্রিয় নবীর সুন্নত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে।
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সাঁঝের বেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখো।কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্জ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩১৬)
ঘুমের আগে ঘুমানোর দোয়া ও সুন্নত।
সব সময় বিছানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা : রাতে শোয়ার পূর্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত। তাই ঘুমানোর আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবে, যাতে খাবারের কোনো কিছু লেগে না থাকে। শয্যা গ্রহণের পূর্বে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা যেন বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। (বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
চোখে বেজোড় সংখ্যায় সুরমা লাগানো সুন্নত। ডান কাতে শয়ন করা সুন্নত। শয়নকালে দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সব দোয়া পড়তে না পারলে ছোট এ দোয়াটি পড়া যায় :
ঘুমানোর দোয়া।
اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনারই নামেই মরে যাই আবার আপনারই নামেই জীবন লাভ করি।’‘
সুরা পাঠ : সুরা এখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা এখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যতদূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সুন্নত : রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকট আসতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
ঘুম থেকে ওঠার পর যেই কারণে দোয়া পড়বেন।
প্রবাদ আছে, ‘ঘুম আর মৃত্যু সমান কথা’। কিন্তু এ প্রবাদবচন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিসেও প্রমাণিত। তিনি মানুষকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এভাবে দোয়া করতে বলেছেন, ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আ’মু-তু ওয়া আ’হইয়া। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমারই নামেই আমি মৃত্যুবরণ করছি এবং তোমারই অনুগ্রহে জীবিত হব।’ (বুখারি)
যেহেতু মানুষ ঘুমের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য মৃত্যুবরণ করে; আবার আল্লাহর অনুগ্রহে জীবিত হয়। তাই সাময়িক ঘুম নামক মৃত্যু থকে জেগে ওঠার কারণেই আল্লাহর শোকরিয়া আদায় এবং দোয়া করা প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য জরুরি।
ঘুম থেকে ওঠার পর মানুষ যে কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট শোকরিয়া আদায় করবে এবং নিজেদের জন্য দোয়া করবে যা হাদিসে পাক দ্বারা বোঝায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট করেছেন।
তাই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত ঘুম থেকে ওঠার পর প্রিয়নবির শিখানো এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার শোকরিয়া আদায় করবে এবং নিজেদের জন্য দোয়া করবে। দোয়াটি হলো-
ঘুম থেকে ওঠার পর দোয়া-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَمَا أَمَاتَنَاوَإِلَيْهِ النُّشُورُ
বাংলা উচ্চারণ-আলহামদু লিল্লাহিল লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমা’তানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
অনুবাদ : সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির ঘুমানোর এ ছোট্ট আমলটি করে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ঘুমানোর দোয়া