তাহাজ্জুদ নামাজ

অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে চান। প্রথমত, তাহাজ্জুদ নামায সুন্নত জায়েদা বা নফল নামায এবং নফল নামাযের আলাদা কোন নিয়ম নেই। এটি একটি সাধারণ নামাযের মতো পড়া হয়। তবে সকল প্রকার নফল নামাযে দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাযের

তাহাজ্জুদের নফল নামাজকে মহানবী (সা.) শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। শরীয়ত মতে, মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামায পড়া হয় তাকে সালাত তাহজুদ বা তাহজুদ নামায বলে।

তাহাজ্জুদ নামায রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও ফরযের পূর্বে ফরয ছিল। এ কারণে তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদের নামাজ বাদ দেননি। তবে উম্মাহ মুহাম্মাদিয়ার জন্য এটা সুন্নাতের বাইরে, অর্থাৎ এই নামায পড়লে অনেক ফজিলত হবে, কিন্তু না করলে কোন গুনাহ হবে না।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখে, তার অতীত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতে রোজা রাখে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করে, তার অতীত জীবনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (বুখারি ও মুসলিম)।

কোনো রোজাদার যদি তাহাজ্জুদ নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমার প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষভাগে আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেনঃ যে আমার কাছে দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব। সে যা চাইবে আমি তা দেব। যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।” (বুখারি ও মুসলিম)

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহজুদ নামাজের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব

শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে থাকে, তখন যারা তাহাজ্জুদ পড়েন, তারা বিশ্ব প্রতিপালকের ভালোবাসায় জাগ্রত হন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তারা তাদের শয্যা ত্যাগ করে এবং আশা ও ভয়ের সাথে তাদের পালনকর্তাকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

শুধু দোয়াই নয়, রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা এবং ক্ষমা চাওয়া একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। মুমিনদের গুণাবলী কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিশ্বস্ত ব্যয়কারী এবং রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত 17)।

তাহজুদ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো তাহজুদের সালাত।” (মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩)।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে, নবী মুহাম্মদ (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সুপারিশ করেছিলেন।

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরায় এই দুআটির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক শ্রেণীর লোক যারা বিনা মূল্যে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে তারা হল যারা তাহাজ্জুদ নামায মনোযোগ সহকারে আদায় করে।

আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষ করে রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন: “হে পোশাক পরিধানকারীগণ, কিছু অংশ ব্যতীত রাতের নামাযে দাঁড়াও” (সূরা: মুজামিল, আয়াত: 1-2)।

এশার নামায থেকে ফজর পর্যন্ত সালাত লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়া যায়। তবে তাহাজ্জুদের নামায মধ্যরাতের পর আদায় করা উত্তম। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়া উত্তম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আট রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়াই উত্তম। কিন্তু এটা পড়ার প্রয়োজন নেই। সম্ভব হলে ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামায পড়ুন। তবে ৮ রাকাত নামায পড়া উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাত আদায় করুন। এটা সম্ভব না হলে মাত্র ২ রাকাত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম। তবে তাহজুদ নামাযের কোন প্রভাব নেই।

প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই নামায দুই রাকাতে পড়তেন। যে কোন সূরার সাথে এই দুআ পাঠ করা যায়। তবে দীর্ঘ তিলাওয়াত করে নামাজ পড়তেন। তাই দীর্ঘ তেলাওয়াতে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।

এভাবে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামায দুই রাকাতে আদায় করা উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতের শেষ প্রহরে সঠিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহজুদ নামায নফল না সুন্নত?

আলেমদের মতে তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সালাত চার, ছয়, আট, দশ রাকাত প্রমাণিত। এর চেয়ে কম বেশি পড়তে ক্ষতি নেই। যেহেতু নফল তাই সে যত খুশি পড়তে পারবে।

তাহাজ্জুদের সময়

গভীর রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে অজ্ঞান থাকে, তখন মুমিন ইবাদতের জন্য জেগে ওঠেন এবং ভোর পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। মধ্যরাতের পর ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে এশার পরে এবং বিতরের নামাযের আগে তাহজুদ নামায পড়তে হবে। তবে তাহাজ্জুদ নামায রাতের শেষভাগে আদায় করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

এশার নামাজের পর তাহজুদ পড়া যাবে কি?

তবে এশার নামাজের সময় থেকে সূর্যোদয়ের সময় পর্যন্ত এ দুআ পাঠ করা যায়। আর এতে তাহাজ্জুদের ফজিলত পাওয়া যায়। কারণ তাহাজ্জুদের সালাতের প্রকৃত সময় শুরু হয় এশার নামাযের পর, যদিও উত্তম সময়টি ঘুম থেকে ওঠার পর।

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজে ওঠার কৌশল

এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। যে ইবাদতকে শয়তান সবচেয়ে ঘৃণা করে, তা হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। শয়তানের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে যায় শয়তান তখন তার মাথার কাছে এসে বসে তিনটি গিঁট বাঁধে। প্রতিটি গিঁট বাঁধার সময় একটি কথা বলে. তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও। যখন বান্দা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে, তখন একটি গিঁট খুলে যায়। সবশেষে যখন সে নামাজ পড়ে, তখন শেষ গিটটি খুলে যায়।’

তাহাজ্জুদের সময় হলে ঘুম থেকে ওঠার জন্য কিছু বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে।

প্রথমত, ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত নিয়ে ঘুমাতে উত্তম। এর সবচেয়ে চমৎকার তাৎপর্য হলো, কোনো কারণে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য ঘুম থেকে উঠতে না পারলে সওয়াব পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয়ত, অহেতুক কাজ থেকে বিরত থেকে ঠিক সময়ে দ্রুত ঘুমাতে হবে। দ্রুত ঘুমালে কিয়ামুল লাইল ও ফজরের শক্তি সঞ্চয় হয়।

তৃতীয়ত, তাহাজ্জুদের নামাজকে সহজভাবে নিতে হবে। ফজরের নামাজের ২৫-৩০ মিনিট আগে উঠে এই অভ্যাস রপ্ত করা যায়। এরপরে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যায়।

চতুর্থত, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘুমের আদবগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন অজুসহ ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুমের দোয়া পাঠ করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর একটি সুন্নত হলো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দু হাতের তালুতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পাঠ করা। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এসব সুন্নত পালন করা ভালো।

জানাজার নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *