ফরজ গোসলের নিয়ম

দ্বী‌নের জ্ঞান না থাকায় দেখা যায় অনেক ঈমানদার পুরুষ ও রমনীরা ফরজ গোসলের নিয়ম জা‌নে না। যার ফলে ফ‌লে তারা নাপাক অবস্থায় ইবাদত কর‌তে থা‌কে। নাপাক অবস্থাতেই জীবন-যাপন কর‌তে
থা‌কে। এর ফ‌লে তা‌দের ইবাদত কবুল হয়না।

এটা ঈমানের ক্ষেত্রে চরম ভয়ানক ব্যাপার। কা‌জেই সাবধান হওয়া চাই।

যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে

(১) স্বপ্নদোষ অথবা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
(২) নারী পুরুষ মিলন করলে ( বীর্যপাত হোক বা না হোক)
(৩) মেয়েদের হায়েয হ‌লে।
(৪) নেফাস অর্থাৎ সন্তান প্রস‌বের পর রক্ত ক্ষরণ হ‌লে।
(৫) ইসলাম গ্রহণ করলে (নব মুস‌লিম হলে)

ফরজ গোসলের নিয়ম

গোস‌লের ফরজ ৩ টি

(১) গড়গড়ার সা‌থে কু‌লি করা (য‌দি রোজাদার না হয়)
(২) না‌কের নরম জায়গা পর্যন্ত পা‌নি পৌঁছা‌নো।
(৩) সমস্ত শরী‌র ভালভা‌বে ধৌত করা।

উপ‌রোক্ত তিন‌টি কাজ কর‌লেই গোসল হ‌য়ে যা‌বে। ত‌বে নি‌ম্নে ব‌র্ণিত সুন্নাত ত‌রিকায় গোসল কর‌লে গোসল প‌রিপূর্ণ হ‌বে এবং তা এবাদ‌তের ম‌ধ্যে গণ্য হ‌বে।

ফরজ গোসলের নিয়ম
গোসল করার সুন্নাত তরীকা

(১) গোস‌লের শুরু‌তে বিস‌মিল্লা‌হির রহমা‌নির রাহীম পড়া‌।

(২) প‌বিত্রতা অর্জ‌নের উদ্দেশ্যে গোসল কর‌ছি ম‌নে ম‌নে নিয়ত করা।

(৩) প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। ( বুখারী শরীফ )

(৪) অতঃপর ডানহা‌তে পা‌নি নি‌য়ে নাপাকীর স্থান তথা লজ্জাস্থান বাম হাত দিয়া তিনবার ধু‌তে হ‌বে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধুতে হবে। ( মুস‌লিম)

(৫) এবার বামহাতকে ভালো করে ধুইয়ে ফেল‌তে হবে।

(৬) এবার আমরা যেভা‌বে ওজু ক‌রি সেভা‌বে অযু কর‌তে হ‌বে। ( মা’য়া‌রিফুল হা‌দিস)

(৭) ওজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে। (বুখারী)

(৮) অতঃপর ডান কাঁ‌ধে তিনবার পা‌নি ঢালতে হ‌বে। ( ফাত‌ওয়ায়ে শামী )

(৯) এরপর বাম কাঁ‌ধে তিনবার পানি ঢাল‌তে হ‌বে ( শামী) এবং সমস্ত শরী‌রে পা‌নি পৌঁছাতে হ‌বে যা‌তে শরী‌রের কোন লোমই শুকনা না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি পৌঁছা‌তে হবে।

সব শেষে গোস‌লের জায়গা হ‌তে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ভালোভাবে ধুতে হবে। ( বুখারী, মুসলীম, নাসায়ী, শামী )

খেয়াল রাখ‌তে হ‌বে
পুরুষ হলে দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল খুব ভালোভাবে ভিজতে হবে।

এভাবে গোসলের পর আর নতুন করে ওযু করতে হবে না।

রাসূল (সাঃ ) এভা‌বে গোসল শে‌ষ কর‌তেন এবং গোসল শে‌ষে রুমাল ব্যবহা‌রের প‌রিব‌র্তে শরীর মোবারক থে‌কে পা‌নি নিঃ‌শে‌ষে ঝে‌ড়ে নি‌তেন। আবার কখনও রুমাল দ্বারা মু‌ছে ‌নি‌তেন।
আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে কুর’আন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে চলার তাওফিক দান ক‌রেন ।

তথ্যসুত্র: জামীউস সুনান ।
মাওলানা মুফ‌তি বশীর আহমদ ।

ফরজ গোসলের নিয়ম

প্রশ্ন


একবার আমার গোসল ফরয হলে খুব তাড়াহুড়া করে গোসল করি। তখন নাকে পানি দিতে ভুলে যাই। এরপর যোহরের ফরয নামায আদায় করি। পরে যখন মনে পড়েছে তখন পুনরায় গোসল করে আবার নামায আদায় করি।

জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় সঠিক নিয়ম কী? এবং আমি যেভাবে করেছি তা কি যথার্থ হয়েছে?

উত্তর
এক্ষেত্রে শুধু নাকে পানি দিয়ে নিলেই গোসল হয়ে যেত। দ্বিতীয়বার গোসল করার দরকার ছিল না। তবে গোসল করে পুনরায় নামায পড়ার দ্বারা তা আদায় হয়ে গেছে।

-কিতাবুল আসার, হাদীস নংং ৫৯; কিতাবুল আসল ১/৩২; মাবসুত, সারাখছী ১/৬২; শরহু মুখতাসারিত ত্বহাবী ১/৩৩৮; ইলাউসসুনান ১/২০৬

সুত্র: মাসিক আল কাউসার

ফরজ গোসলের নিয়ম

প্রশ্ন


ক) গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার দরুন গোসল করতে সক্ষম নয়। কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিও রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় কি শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়লেই হবে নাকি তায়াম্মুমের সাথে অযুও করতে হবে?

খ) জনৈক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা বা শক্ত শক্ত অনুভব করেছে। কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই এবং এটা কি বীর্য না অন্য কিছু তাও বুঝতে পারছে না। আমার প্রশ্ন হল,উল্লেখিত অবস্থায় কি ঐ ব্যক্তির উপর গোসল করা ফরয?

উত্তর
ক) এক্ষেত্রে শুধু তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে। অযু করবে না। তায়াম্মুমের সাথে অযু করার বিধান নেই।

উল্লেখ্য, গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পরে ঐ ব্যক্তি থেকে অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করা জরুরি। কেননা সে অযু করতে সক্ষম।-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩, ৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫; ফাতাওয়ে হিন্দিয়া ১/৩০; আলমুহিতুল বুরহানী ১/৩৩০; আলবাহরুররায়েক ১/১৫২; ফাতাওয়া আত তাতারখানিয়া ১/৩৯৪

খ) ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা পেলে কিংবা বীর্যের আলামত পেলে স্বপ্নের কথা স্মরণ না হলেও গোসল করা ফরয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য গোসল করা ফরয। হাদীস শরীফে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠার পর ভিজা অনুভব করে, তবে তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ তাকে গোসল করতে হবে। আর ঐ ব্যক্তি যার স্বপ্নের কথা স্মরণ আছে কিন্তু সে কাপড়ে বা শরীরে কোনো ভিজা পায়নি তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, না, তার জন্য গোসল করা জরুরি নয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৮-১৪৯; মাবসূত, সারাখসী ১/৬৯; ফাতহুল কাদীর ১/৫৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৩০-২৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩

মাসিক আল কাউসার থেকে

আকিকার নিয়ম ও ভুলভ্রান্তি

ফরজ গোসলের নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *