ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে? রমজানের ভুল-ত্রুটির ক্ষতিরপূরণস্বরূপ এবং দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করা থেকে অব্যাহতি লাভের কৃতজ্ঞতায় ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। ফিতরা আদায় করার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব পালনে আত্মনিয়োগ করি।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে

প্রকৃত হকদারকেই ফিতরা দিতে হবে। যাকে তাকে ফিতরা দেয়া যাবে না। কাকে ফিতরা দেয়া যাবে সে সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। আর তাহলো-

যারা জাকাত পাওয়ার অধিকার রাখে। তারাই সাদকায়ে ফিতরের হকদার। যেসব খাত ও ব্যক্তি জাকাতের হকদার নয়, তাদের ফিতরা দেয়া যাবে না। এ বিষয়টি কুরআনুল কারিমের সুরা তাওবাহ-এর ৬০ আয়াত দ্বারাই মীমাংসিত।

আল্লাহ তআলা এ আয়াতে জাকাতের আটটি খাতের বিবরণ তুলে ধরেছেন। আর এ লোকেরাই ফিতরা গ্রহণ করতে পারবেন। এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো-

নিঃস্ব ফকির

ফকির বলা হয় যার কোনো সম্পদ নেই, নেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন, যা দ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। আবার কেউ বলেছেন, ফকির সে যার সামান্য সম্পদ আছে। তবে জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করে।

আল্লামা তাবারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফকিরের সংজ্ঞায় বলেন, ঐ অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যে কারো কাছেই কিছুর প্রার্থনা করে না।

অভাবগ্রস্ত মিসকিন

মিসকিন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে, যা দ্বারা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। আল-ফাতওয়া আল-হিন্দিয়ায় এসেছে, মিসকিন এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কিছুই নেই, যে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায় এবং খাদ্য-বস্ত্রের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়।

জাকাত উঠানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি

যারা যাকাত আদায়কারী, যাকাত সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং তার বণ্টনকারী এদের সবাইকে যাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে-

  • তাকে মুসলিম হতে হবে,
  • পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে,
  • জাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে,
  • আমানতদারি ও কাজের যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে,
  • আজাদ মুসলিম নিয়োগ করতে হবে, দাস নয়।

যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন

ইসলামের প্রতি যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য লোকদের জাকাতের খাত থেকে প্রদান করা। ইমাম যুহরির মতে, যে ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করবে, সে-ই এর মধ্যে গণ্য, সে যদি ধনী হয় তবুও।

আরও পড়ুন : ফিতরা কার উপর ওয়াজিব

দাসমুক্তির জন্য

মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে যে ক্রীতদাস তার মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবন্ধ হয়েছে। কিংবা কোনো মুসলিম যুদ্ধবন্দিও এ খাতের আওতায় পড়বে। ইবনুল আরাবির মতে, মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে, তেমনি মুসলিম বন্দিকে কাফিরদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার কাজেও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

ঋণের ভারে জর্জরিত যার ঋণ পরিশোধের কোনো অবস্থান নেই। এমন ব্যক্তিকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা উত্তম।

আল্লাহর পথে খরচ করা

আল্লাহর পথ বলতে আকিদা-বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় যে পথ।

-্মুসাফিরদের জন্য

নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তি যদি সফরে গিয়ে বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব হয়, তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা।

মনে রাখতে হবে

হাদিসে বর্ণিত গম, যব, কিসমিস, খেজুর ও পনির হলো ফিতরা পণ্য। এসব পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে গবির মানুষের তেমন কোনো উপকারে আসবে না। তাই গরিব-মিসকিনকে এসব পণ্যের সমমূল্য নগদ টাকা দিলে উপকৃত হবে। আর তাতে গরিব-অসহায় মানুষের নগদ অর্থের প্রয়োজনীয়তাও কেটে যাবে।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে

ফিতরা আদায়ের উত্তম পন্থা

নিজ পরিবার-পরিজনের মধ্য যারা গরিব-অসহায়, তারাই ফিতরার প্রথম হকদার। আর একজনকে ন্যূনতম পূর্ণ একটি ফিতরা দেয়া উত্তম। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কয়েক জনের ফিতরাও একজনকে দেয়া যেতে পারে। এতে গরিব-অসহায় ব্যক্তির উপকার হয়।যে অর্থে ফিতরার এ অর্থকে উপযুক্ত যে কোনো কাজেও লাগাতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাস্থানে ফিতরা দেয়ার তাওফিক দান করুন। ফিতরা আদায় করার মাধ্যমে রোজার ভুল-ত্রুটিগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে না

ফিতরা কাকে দেয়া যাবে না? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল, যাকে যাকাত দেয়া যাবে না তাকে ফিতরাও দেওয়া যাবে না।

Related searches

রিতল কাকে বলে

ফিতরা কত টাকা ২০২৩

ফিতরা কার উপর ওয়াজিব মাসিক আল কাউসার

এক রিতল সমান কত

ফিতরা অর্থ কি

এক সা পরিমাণ কত কেজি

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব

এক রিতিল সমান কত গ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *