হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের দিকে পা বাড়াবে, তাঁর প্রতিটি কদমে কদমে আল্লাহ তাঁর জন্য একটি করে নেকি লিখে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন এবং একটি করে গুনাহ মাফ দেবেন।
আলোচনার বিষয়: মসজিদে প্রবেশের দোয়া।
মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও পবিত্র স্থান। এটি আল্লাহ তায়ালার ঘর এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। মসজিদের ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া সুন্নত। এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার দোয়া পাঠ করাও সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পবিত্রতা অর্জন করে ধীরস্থিরভাবে মসজিদে যেতে এবং ডান পা দিয়ে প্রবেশ করতে বলেছেন। মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া সমূহ আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ এই আলোচনায় তুলে ধরা হলো-
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
মহান আল্লাহ তায়ালার পছন্দের স্থান পবিত্র মসজিদে প্রবেশের অন্যতম আদব হচ্ছে মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া। মহানবী (সাঃ) মসজিদে প্রবেশের সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেছেন-
আরবি: اللَّهمَّ افتَحْ لِيْ أبوابَ رَحْمَتِك
বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহু-ম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিক।”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো উন্মুক্ত করে দিন।”
অন্য বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে যেন সর্বপ্রথম নবী (সাঃ) এর উপর সালাম পাঠ করে, অতঃপর এই দোয়া পাঠ করে-
আরবি: بِسْمِ اللهِ وَالصَّلّاةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أبوابَ رَحْمَتِك
বাংলা উচ্চারণ : “বিসমিল্লাহি, ওস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা’ রাসুলিল্লাহ। আল্লাহু-ম্মাফ তাহলি আব-ওয়াবা রহমাতিক।”
বাংলা অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, আল্লাহর রাসুলের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক । হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে করে দিন। ( ইবনে মাজাহ্- হাদীস নং: ৬৩৩ )
মসজিদে প্রবেশের পর করণীয়ঃ
মসজিদে প্রবেশের পর করণীয় সম্পর্কে হযরত নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন বসার আগে দুই রাকাত নামাজ (দুখুলুল মসজিদ) পড়ে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।
তিনি আরও বলেন ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগানে ঘোরাফেরা করবে, তখন সেখানে কিছু ফলমূল খেয়ে নিয়ো।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা:) ‘জান্নাতের বাগান কোনটি?’ রাসুলাল্লাহ (সা:) বললেন, ‘জান্নাতের বাগান হলো মসজিদগুলো।’ তাঁরা বললেন, ‘এর ফল খাওয়া কেমন?’ রাসুলাল্লাহ (সা:) বললেন, ‘ মসজিদের ভিতেরে এই তাসবিহগুলো পড়া—সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।’ (সহিহ তিরমিজি)
মসজিদে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার দোয়া।
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতি পদক্ষেপে কল্যাণ খুঁজতে। মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও বের হওয়ার দোয়া শিক্ষার পাশাপাশি নবীজি (সাঃ)- শয়তানের প্ররোচনায় থেকে মুক্তির জন্য তিনি নিম্নোক্ত দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন-
আরবি: اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ – بِسْمِ اللّهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰي رَسُوْلِ اللّٰهِ اَلّلهُمَّ اغْفِرْلِي وَ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
বাংলা উচ্চারণ : “আউযুবিল্লাহিল আযিম, ওয়া-বি ওয়াযহি হিল কারিম ওয়া সুলতানি হিল ক্বাদিমি মিনাশ শায়ত-নির রাজীম। বিসমিল্লাহি, ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আল্লাহু-ম্মাফ তাহলি আব-ওয়াবা রহমাতিক।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
যখন কেউ এভাবে মসজিদে প্রবেশের দোয়া করে, তখন শয়তান সেই ব্যক্তির উপর কুমন্ত্রণা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে ও সুন্দরভাবে আল্লাহর ইবাদত করা যায়।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
মহানবী (সাঃ) মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও বের হওয়ার দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেছেন –
আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْل
উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা।”
অর্থ: “হে আল্লাহ্, আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।”
মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার পর দোয়া
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর রাসূল (সাঃ)- এর উপর দুরুদ ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে এই দোয়া পড়তে হয়-
আরবি: بِسْمِ اللَّهِ وَالصّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা, আল্লা-হুম্মা আ‘সিমনি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম।
বাংলা অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর রাসূলের উপর দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার দয়ার দুয়ারগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ! আমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে সুরক্ষিত রাখুন।” (আবু দাঊদ, সহিহুল জামি, ইবনুস সিন্নি, ইবনে মাজাহ্)
শেষকথা
মুসলিম উম্মাহর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ফরজ। জামায়াতের সাথে সেই সালাত আদায়ের বহুগুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করার পাশাপাশি মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও বের হওয়ার দোয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল।
جـــــزاکـــــــــــ الله خيرا
আরও পড়ুন