শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) নাম ছিল তাঁর আহমাদ। নবীজির নামে নাম রেখেছিলেন বাবা-মা। নিশ্চয়ই বড় আশা ছিল বুকে। প্রিয়তম সরওয়ারে কায়েনাত রাহমাতুল্লিল আলামিনের মুবারক নামের বরকতে পুত্রের জীবন যেনো হয় আলোকিত, উদ্দীপিত, অনুসরণীয়। সে যেনো হয় নবীজির সিরাতের উত্তম প্রতিচ্ছবি। না জানি আরও কত আশা ও স্বপ্ন হৃদয়ে দুলছিল বাবা মাওলানা আবদুর রহিম রাহ. ও সম্মানিতা মায়ের বুকে। দুজনেই ছিলেন মহান দুই বংশের উত্তর-মানুষ। বাবা আল্লামা আবদুর রহিম রাহ. ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাবের বংশধর।
মা ছিলেন শাইখ মুসা কাজিমের (যিনি বনু হাশিমের সায়্যিদ ছিলেন) বংশধর। বাবা ছিলেন সেই সব মহান পুরুষদের একজন ‘ফতোয়ায়ে আলমগিরি’ রচনার মহান দায়িত্ব যাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল। ছিলেন নকশবন্দী তরিকার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সুফিদের অন্যতম। কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি রহ. একরাতে স্বপ্নে সুসংবাদ দিলেন পুত্র সন্তানের। বললেন, নাম রেখো আহমাদ। পুত্রের সুসংবাদ পেয়ে যেমন খুশি ছিলেন বাবা-মা, ‘আহমাদ’ নামটি রাখার সময় তেমন ‘স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার’ দ্যোতনায় কি দুলছিল না তাদের মন? বাবা-মায়ের কত কত ঋণ আমাদের ওপর! একটি সুন্দর মিষ্টি অর্থবহ নাম রাখার জন্য বাবা-মা কত পেরেশান হন! এর-ওর কাছে, মসজিদের ইমামের কাছে, মুরুব্বিদের কাছে হন্যে হয়ে ফেরেন। কেবল একটি নামের জন্য! রব্বিরহামহুমা কামা রব্বায়ানি সগিরা।
কিন্তু মানুষটি সাধারণ্যে পরিচিত হলেন ‘আল্লাহর ওলি’ নামে; এতো সুন্দর আহমাদ নামটি তার কেউ মনে রাখে নি। কেন? ছিলেন-ই এমন মানুষ যাকে ‘আল্লাহর ওলি’ ডাকতে হৃদয় প্ররোচিত করে। আহমাদ বললে আজ তাকে কজন চিনবে? কিন্তু যদি বলি ওলিউল্লাহ দেহলবি? আহ! কী অসাধারণ পরিচিতি! যে মানুষটি মৃত্যুর তিনশ বছর পরও লক্ষ-কোটি মানুষের মুখে ‘আল্লাহর ওলি’ বলে বরিত হন, পরিচিত হন, বারবার উচ্চারিত হন তার সাথে রব্বে কারিমের দয়ার আচরণ, মুহাব্বত ও শফকাতের আচরণ না জানি কত কোমল, কত প্রেমময়! ইয়া আল্লাহ, আমাদেরও বানিয়ে দিন না তেমন!
সেই আল্লাহর ওলি মানুষটি মৃত্যুর আগে বিশেষ একটি ওসিয়ত করে গেছেন আমাদের জন্য। ওসিয়তটি তার অনুপম গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’র ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘রাহমাতুল্লাহিল ওয়াসিআহ’র ভুমিকাতে তুলে দিয়েছেন দারুল উলুম দেওবন্দের ভূতপূর্ব ‘সদরে মুদাররিস’ ফকিহুন নফস মুফতি সাইদ আহমাদ পালনপুরি রাহ.। স্মৃতি থেকে লেখছি। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. বলে গেছেন :
প্রতিদিন কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু অংশ অবশ্যই পড়বে। কখনো যেনো মিস না হয়। যদি নিজে পড়তে না পারে, তাহলে কারও মাধ্যমে পড়িয়ে তার তরজমা অবশ্যই শুনে নেবে। এই মহান বরকতময় বিষয় থেকে কোনভাবেই বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়।
ফেসবুকে ভাল কোনো পোস্ট পড়া ও আমলের চেষ্টা করা অবশ্যই কল্যানকর। তদপেক্ষা অধিক কল্যানময় ও বরকতপূর্ণ কুরআন ও হাদিসের পাঠ। সেটা যদি কোনো আহলে ইলমের পায়ের কাছে বসে করা যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা। তালিবুল ইলম ভাইয়েরা কি আল্লাহর এই বিরাট নিআমতের শুকরিয়া করে শেষ করতে পারবেন? যারা তালিবুল ইলম হতে পারে নি তারা কি আমরণ মাহরুম থেকে যাবেন?
✒️ মুহতারাম Nuruzzaman Nahid হাফি.
(Image credit: উইকিপিডিয়া)
শাহ ওয়ালিউল্লাহর শেষ ওসিয়ত (রাহিমাহুল্লাহ)
সহজেই পালন করা যায় এমন ২০ সুন্নত