সহবাসের দোয়া সমস্পকে জনেন। মানুষের স্বভাবজাত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য, চারিত্রিক উৎকর্ষ ও পবিত্রতা রক্ষার অন্যতম উপায় বিয়ে। মানবতার ধর্ম ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পূতপবিত্র জীবনযাপনের জন্য বিয়ের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে আল্লাহ তাআলা বিয়ের বিষয়টি সহজ ও স্বাভাবিক করে দিয়েছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একজন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ০৩)
স্বাভাবিতই বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর শারিরিক সম্পর্ক হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুন প্রজন্ম আগমন করে। তাই স্বামী-স্ত্রী শারিরিক সম্পর্কের সময় বা সহবাসের সময় কোন দোয়া পড়বে— তা অনেকে জানতে চান। তাদের জন্য সংক্ষেপে সহবাসের দোয়া বিষয়ে আলোচনা করা হলো। কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের ইচ্ছে করলে, নিম্নোক্ত দোয়া পড়া তার জন্য সুন্নত।
সহবাসের সময় যে দোয়া পড়বেন।
আরবি :
بِسْمِ اللَّهِ،اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَارَزَقْتَنَا
বাংলায় উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি। তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের যে সন্তান দান করবে (এ মিলনের ফলে)— তা থেকেও শয়তানকে দূরে রাখো।’
স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে দোয়া পড়বেন কেন?
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী সহবাসের মনোবাসনায় বলে— بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا; তাহলে তাদের ভাগ্যে যে সন্তান নির্ধারণ করা হয়, শয়তান কখনো তার ক্ষতি করবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৮৮; মুসলিম, হাদিস : ১৪৩৪)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘শয়তান তার ক্ষতি করবে না, এবং তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতেও দেওয়া হবে না।’(বুখারি, হাদিস : ৩২৮৩)
এসব বর্ণনা প্রমাণ করে যে, সহবাসের সময় এ দোয়াটি পড়া সুন্নত। তাই যারা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস মিলিত হবেন, তারা ওই সময়ে দোয়াটা পড়ে নেওয়া উত্তম। এতে আল্লাহ তাআলা অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন।
সহবাসের দোয়া পড়তে ভুলে গেলে।
যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে সহবাস করে এবং পরবর্তীতে যাকে সন্তান দেওয়া হয়, তার জন্য এ হাদিসে ওয়াদা রয়েছে : “শয়তান তার ক্ষতি করবে না।” তবে যে এ দোয়া পড়তে ভুলে যায়, শয়তান তার সন্তানের অবশ্যই ক্ষতি করবে, এমন কিছু এ হাদিসে নেই। বরং তা কতক মনীষী থেকে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাই, আল্লাহ সন্তানকে শয়তান থেকে হিফাজত করবেন, এ আশায় নিয়মিত এ দোয়াটি পড়ে নেয়া আবশ্যক।
‘শয়তান ক্ষতি করতে পারবেনা’র ব্যখ্যা
উল্লেখিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান তার ক্ষতি করবে না’— (لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا ) এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, এ সন্তানটি নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবে; যার ওপর শয়তানের কর্তৃত্ব থাকবে না।
আবার কেউ বলেছেন, শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। অথবা শয়তান তাকে কুফরির মাধ্যমে গোমরাহ করতে পারবে না।
কাজি আয়াজ (রহ.) বলেছেন, ‘তার ক্ষতি করতে পারবে না’ এর অর্থ কেউ বলেছেন- শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। কেউ বলেছেন, জন্মের সময় ও অন্যান্য সন্তানের বিপরীতে— শয়তান তাকে খোঁচা দেবে না।
তিনি আরও বলেন, তবে সব ধরনের ক্ষতি, শয়তানি ওয়াসওয়াসা ও পথভ্রষ্টতা থেকে সে সুরক্ষা পাবে— এ অর্থ কেউ করেন নি। (ইমাম নববি (রহ.) ‘সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যগ্রন্থে’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।)
সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে?
যার উপর গোসল ফরয তার জন্য পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পাঁচটি কাজ করা নিষেধ।
১. সালাত আদায় করা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “হে মুামিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাত আদায় করো না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা বুঝতে পার যে, তোমরা নামাযে কী বলছ । তাছাড়া বড় নাপাকি হয়ে গেলে গোসল না করে সালাত আদায় করো না।” (সূরা ৪; নিসা ৪৩)
২. কুরআন কারীম স্পর্শ করা
ইবনে ওমর (রা) বর্ণনা করেন যে, ‘অপবিত্র অবস্থায় কুরআন কারীম স্পর্শ করবে না।’ (দারা কুতনী: ৪৩১)
৩. কুরআন তিলাওয়াত করা
আলী (রা) বলেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ (স) সদাসর্বদা আমাদেরকে কুরআন পড়িয়েছেন, তবে যখন বড় নাপাকি অবস্থায় থাকতেন সে সময় ছাড়া।” (তিরমিযী: ১৪৬, আহমদ: ১০১৪)।
৪. মসজিদে অবস্থান
আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (স) বলেছেন, “হায়েযওয়ালী নারী ও গোসল ফরয এমন নাপাক ব্যক্তির জন্য মসজিদে যাওয়া বৈধ না। তবে মসজিদের ভেতর দিয়ে অন্য কোথাও যেতে চাইলে তা বৈধ। (আবু দাউদ: ২৩২)
৫. কাবা ঘর তাওয়াফ করা
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, অর্থাৎ আল্লাহর ঘর কাবায় তাওয়াফ করা নামায আদায় তুল্য।’ (নাসাঈ: ২৯২০)
গোসল ফরয অবস্থায় কী কী কাজ বৈধ?
১. ওযূ করে বা উভয় হাত-মুখ ধুয়ে খাবার গ্রহণ ও সাহরী খাওয়া,
২. দু’আ ও যিকর করা।
৩. ওযু করে পশু জবাই করা।
৪. তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে ওযু করে মসজিদে প্রবেশ; যেমন মসজিদে চুনকাম করা, সংস্কারমূলক কাজ করা ইত্যাদি।
৫. বড় নাপাকিযুক্ত ব্যক্তির সাথে শয়ন, তবে নাপাকি যেন নিজের গায়ে না লাগে বা নিজের নাপাকি যেন অন্যের গায়ে না লাগে সে জন্য সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। ৬.সাংসারিক যাবতীয় কাজ করা যাবে।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (স.) তার সাথে সাক্ষাত করলেন। তখন তিনি (আবু হুরায়রা) নাপাক ছিলেন। তিনি (আবু হুরায়রা) বলেন, আমি চুপচাপ সরে গেলাম এবং গোসল করে তার নিকট এলাম। তিনি বললেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে, অথবা কোথায় গিয়েছিলে? আমি বলছিলাম, আমি নাপাক ছিলাম। তখন তিনি বললেন, মুমিন ব্যক্তি কখনও নাপাক হয় না। (সুনানে তিরমিজি: ১২১)
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ফরজ গোসল অবস্থায় দৈনন্দিক কাজ করা জায়েজ রয়েছে। তবে অপবিত্র অবস্থায় কোনো কাজ করা কিংবা খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি অভ্যাসে পরিণত করে নেওয়া অপছন্দনীয়। কেননা ইসলামে সবসময় পবিত্র থাকার আলাদা কদর রয়েছে। পবিত্রতা অর্জনের ফজিলত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।’ (ফাইজুল কাদির: ৩০৬৫)