সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে, এমন খবর দিয়েছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। জানা গেছে, এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা পরিচালনা করছিল একটি কমিটি, যা গঠিত হয়েছিল ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে। এই কমিটিতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ভাই মাহির আসাদও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা
তুরস্কের সামরিক সূত্র অনুযায়ী, অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল:
১. মাহির আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠী সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে নতুন সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করবে। এই কর্মকাণ্ডগুলোর মধ্যে অপহরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২. সিরিয়ার গণতান্ত্রিক বাহিনী (এসডিএফ) তিশরিন বাঁধে হামলা চালিয়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করবে, যার দায় দামেস্ক সরকারের ওপর চাপানো হবে।
৩. শাম-ভিত্তিক সশস্ত্র দলগুলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াস দিল্লার নেতৃত্বে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটাবে এবং এই ঘটনাগুলো সরকারি বাহিনীর কৃতকর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
৪. সুয়েইদার দুরুজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের সহায়তায় দামেস্কে অগ্রসর হবে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করবে এবং প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করবে, পরবর্তীতে সরকার উৎখাতের ঘোষণা দেবে।
কাতার-তুরস্কের হস্তক্ষেপে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়
কাতারের গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শেষ মুহূর্তে অভ্যুত্থান পরিকল্পনার নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন এবং সরাসরি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর শেখ তামিম তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ফোন করেন এবং পুরো পরিকল্পনার বিস্তারিত জানান। এর পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট দ্রুত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
তুরস্কের কড়া প্রতিক্রিয়া
তুরস্ক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়:
১. ৯০টিরও বেশি তুর্কি যুদ্ধবিমান সিরিয়া ও ইসরায়েল সীমান্তের আকাশে টহল দিতে শুরু করে।
২. তুর্কি নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর উপকূলে মোতায়েন করা হয়।
৩. প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সতর্ক করেন যে, দামেস্কে যেকোনো অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা তুরস্কের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য। তিনি আরও জানান, তুরস্ক সরকার দামেস্কের পক্ষে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পিছপা হবে না।
এর পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে অভ্যুত্থান অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেন। গোয়েন্দা প্রধান অপারেশন রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিন্তু ততক্ষণে সুয়েইদা ও এসডিএফ বাহিনী তাদের অভিযান শুরু করেছিল। পরে ইসরায়েলের নির্দেশে এসডিএফ ও সুয়েইদার দুরুজ গোষ্ঠীগুলো তাদের অভিযান বন্ধ করে দেয়।
এই ঘটনাটি সাংবাদিক আবদুল হামিদ কুতুবের এক প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।
শেষ কথা: তুরস্ক এবং কাতারের সময়োচিত হস্তক্ষেপের কারণে সিরিয়ায় একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারত।