২০২৪ সালে আল্লাহর ইচ্ছায় একটি মিরাকল ঘটেছিল। ফেরাউনের পতন জনমনে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিল, মানুষ আশান্বিত হয়েছিল। প্রবাসীদের অনেকেই দেশে ফিরে কন্ট্রিবিউট করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী উপদেষ্টা নির্বাচন বাংলাদেশকে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই বছর ক্ষমতা প্রত্যাশী প্রধান দুই দল প্রকাশ্যে সংঘাতে লিপ্ত হতে পারে।

ক্ষমতা প্রত্যাশী দলটি নির্বাচনে জয়লাভ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও প্রশাসন দখলের জন্য বিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। তবে প্রশাসন দৃষ্টিকটুভাবে হলেও তাদের দখলে যাবে।

মনে রাখতে হবে, ক্ষমতাসীন দলটিও অশান্তিতে পড়ে যাবে। তারা কখনোই পতিত সরকারের মতো জুলুমকারী হয়ে উঠতে পারবে না। “আমার দেশ,” পিনাকী-ইলিয়াসদের সামাল দেওয়া তাদের জন্য অত্যন্ত দুরূহ হবে। বামপন্থী মিডিয়াগুলোও সমালোচনায় অংশ নেবে।

শিক্ষার্থীরা নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও আপাতত রাজনীতিতে তেমন সুবিধা আদায় করতে পারবে না। গতকালের ঘোষণাপত্রের ইস্যুতে তারা রাজনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

আমার বিশ্বাস, দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্বের একটি ক্ষমতাশালী দেশ। আগে ডারত সরাসরি এই দেশটি নিয়ন্ত্রণ করত। এখন তাদের মাধ্যমে ডারতের প্রভাব কায়েম হবে। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার বাতিলের খাতায় চলে গেছেন।

লড়াকু শিক্ষার্থী-জনতা জীবন দিয়ে ফেরাউনের পতন ঘটালেও, তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এটি মেনে নেওয়া আমার নিজের জন্যও অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

দিনশেষে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারে মুসলিম আইডেন্টিটি ধারণকারী সাধারণ জনগণ, কওমি মাদ্রাসা ও পীর ঘরানার মানুষ।
আমাদের দেশটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল বা শক্তিশালী হোক, তা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটি চাইবে না। তারা অবাধ গণতন্ত্রও চায় না। কারণ, তাতে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতার প্রধান ভাগীদার হয়ে উঠবে নিশ্চিতভাবে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র হবে পরোক্ষভাবে ম্যানুপুলেটিভ, যেখানে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জনমত নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আগামী ১০ বছর সম্ভবত অস্থিরতা বিরাজ করবে, এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে নাজুক অবস্থায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

আমার মতে, ক্ষমতা প্রত্যাশী ইসলামি দলটি আগামী ২০-৩০ বছরেও ক্ষমতার প্রধান স্টেকহোল্ডার হতে পারবে না। ইসলামপন্থী দলগুলোর শক্তিশালী কোনো কৌশল নেই, এবং তারা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেটেড নয়। তারা নিজেদের বাবলে বাস করতে পছন্দ করে।

পতিত দলের পলাতক নেতারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে নির্বাসিত জীবনে কিছুটা মানসিক বিনোদন নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এমনো হতে পারে পশ্চিমাদেশগুলো প্রেসক্রিপশনে আর্মি ক্ষমতা নিলে অবাক হবো না।

ক্ষমতা প্রত্যাশী দলটি জাতীয় সরকার গঠন করলেও অস্থিরতা তেমন কমতে নাও পারে। শিক্ষার্থীরা সেই দলটিকে মেনে নেবে না। ইতোমধ্যেই তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। ১৫ বছর ধরে নিপীড়িত কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ সেই দলের প্রধান চাইলেও সম্ভবত করতে পারবেন না।

এটি আমার ব্যক্তিগত নির্মোহ বিশ্লেষণ। আমি চাই, এই বিশ্লেষণ ভুল প্রমাণিত হোক। দোয়া করছি, যেন আমাদের দেশটি সব দিক দিয়ে এগিয়ে যায়। যদিও তা সম্ভব নয়, কারণ গত ২০ বছরে শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে এটি সংশোধন করতে আরও ২০ বছর লেগে যাবে।

এই দেশের মানুষকে, আগামী প্রজন্মকে হয়তো আরও অনেক লড়াই করতে হবে…

ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *